সবসময় ডেস্ক :: নৌকায় ভোট দিলে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা উন্নয়ন দিয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এ নৌকাই দেবে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট সরকার হবে, স্মার্ট অর্থনীতি হবে, স্মার্ট সমাজ হবে। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করে বাংলাদেশকে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমরা তৈরি করব। নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও সেবা করার সুযোগ দেবেন।
সোমবার বিকালে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিকাল ৩টা ১৯ মিনিটে জনসভামঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতেই তিনি ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।
বাংলার মানুষকে নিজের পরিবার মনে করে তাদের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বারবার আপনাদের সেবার সুযোগ পেয়েছি। আমার চাওয়ার কিছু নেই। মা-বাবা সব হারিয়েছি। তবুও আমি ফিরে এসেছি। তিনি বলেন, যে মানুষগুলোর ভাগ্য গড়ার জন্য আমার বাবা সারা জীবন কষ্ট করেছেন, আমি তাদের ভাগ্য গড়তে চাই।
নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় জানিয়ে দলটির নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক থেকে অতীতের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিএনপিকে নেতৃত্বহীন দল আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় একটা বিষয় নজরে রাখতে হবে। বিএনপি-জামায়াত ২০০৮ সালেই ৩০টি সিট পেয়েছে। তারা জানে যে, তাদের নেতা নেই। মুণ্ডুহীন একটা দল। একটা পলাতক আসামি, একটা কারাগার আসামি। সেই দল এই দেশের নির্বাচন হতে দিতে চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে-কেউ যদি গাড়ি আর মানুষকে আগুনে পোড়াতে চেষ্টা করে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দেবেন। উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবেন। যেন আর কেউ সাহস না পায় এভাবে মানুষের ক্ষতি করতে। এ সময় জনগণের জানমাল রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশে থেকে সহযোগিতা করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখেছি সেই পোড়া মানুষগুলোর দুরবস্থা। চোখে পানি রাখা যায় না। ওদের মধ্যে মনুষ্যত্ব বোধ নেই। কীভাবে পুলিশকে হত্যা করেছে, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। ওই ধরনের ঘটনা যাতে আর ঘটাতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি এলাকায় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানুষের নিরাপত্তা দেবেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আপনারা নিরাপত্তা দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াত জোট তারা মানুষের জন্য কাজ করে না। একজন এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে কারাগারে। আরেকজন মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করবে না বলে লন্ডনে বসে দুর্নীতির টাকা দিয়ে চলছে। তারা এখানে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। ফিলিস্তিনে ইসরাইল যেমন হাসপাতালে বর্বর হামলা করেছে, বিএনপিও একই কায়দায় হাসপাতালে হামলা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনের হাসপাতালে আক্রমণ করেছে, তেমনই বিএনপিও একই কাজ করছে। বিএনপি ইসরাইলের কাছ থেকে মনে হয় শিক্ষা নিয়েছে। তাহলে এরা কারা? এরা কি বাংলাদেশ চায় নাকি ধ্বংস চায়? ওরা বাংলাদেশের ধ্বংস চায়।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেজন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মাধ্যমে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের উপকারভোগীদের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ২ কোটি ৬২ লাখ কৃষক উপকার পাচ্ছেন। তারা অল্প টাকায় সার কিনতে পারছেন, কৃষি উপকরণ কিনতে পারছেন। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে ’৯৬ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে মা ও শিশুরাই বেশি লাভবান হচ্ছে। ২০০১ সালে এসে খালেদা জিয়া তা বন্ধ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘যারা কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা নেবে, তারা নৌকায় ভোট দেবে’! আমার প্রশ্ন-যারা সেবা নিতে যায়, তারা কি আওয়ামী লীগ-বিএনপি চিন্তা করে? তাহলে বোঝেন তারা কতটা হীনম্মন্যতায় ভোগে।
নির্বাচনের আগে বিএনপি বিভিন্ন ওয়াদা দিলেও তা পূরণ করে না উল্লেখ করে সেটি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ওদের চরিত্র বদলাবে না। নির্বাচনের আগে অনেক ওয়াদা করে যায়। এই খুলনা থেকে খালেদা জিয়া বলেছিল, ক্ষমতায় গেলে শিল্পকারখানা চালু করবে। উলটো সব বন্ধ করেছিল। এটাই হচ্ছে তাদের চরিত্র।
বেলা পৌনে ১১টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পর্ব শুরু হয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, ইতিহাস বলে সেই নাম শেখ মুজিবুর রহমান-এই গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বেলা পৌনে ১২টায় পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করা হয়। এরপর গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক থেকে পাঠ করা হয়। পরে স্থানীয় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য শুরু করেন।
যুগা/ডিএস
Leave a Reply