পারভেজ আহমদ ::: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর—এই তিন সীমান্তবর্তী উপজেলাতেই রয়েছে জেলার বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও লিংক রোডের অভাবে একটি স্পট থেকে আরেকটিতে যেতে পর্যটকদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। সময় ও ব্যয়—দুটোই বাড়ে; অনেক সম্ভাবনাময় পর্যটনস্পট রয়ে যায় পর্যটকদের অগোচরে। ফলে বিকশিত হচ্ছে না দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় এই পর্যটন খাত।
২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মুজিবুর রহমান ‘সিলেট–জাফলং–সাদাপাথর–ওসমানী বিমানবন্দর’ পর্যন্ত নতুন সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করেন। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পরবর্তীতে প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
সওজ সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত সড়কের মধ্যে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সাদাপাথর পর্যন্ত ইতোমধ্যে রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সিলেট শহর থেকে জাফলংয়েও সড়ক যোগাযোগ ভালো। কেবল জাফলং থেকে সাদাপাথর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সড়ক উন্নয়ন ও নির্মাণ হলেই পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব। এর জন্য প্রায় ৩০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত সীমান্তঘেঁষে এই সড়ক নির্মিত হলে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ধারায় সিলেটে গড়ে উঠবে নতুন ‘বর্ডার ড্রাইভ’, যেখানে চলতে চলতে পর্যটকরা দেখতে পারবেন সীমান্ত এলাকার অপার সৌন্দর্য।ইতোমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। আগামী জেলা প্রশাসক সম্মেলনে এ সংক্রান্ত সর্বশেষ অগ্রগতি উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২,৮০০ কোটি টাকা।
সূত্র আরও জানায়, ‘বর্ডার ড্রাইভ’ চালু হলে মাত্র দুই দিনেই পর্যটকরা ঘুরে দেখতে পারবেন সিলেটের শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) মাজার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, লাক্কাতুড়া চা বাগান, বাইশটিলা, খাদিম রিসোর্ট, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি, উতমাছড়া, দমদমছড়া, লক্ষণছড়া, পান্থুমাই, খাসিকম, জাফলং, তামাবিল, নলিউরি ফলস, ডিবিরহাওর, জৈন্তাপুর, লালাখাল ও রাতারগুলসহ মোট ২৩টি পর্যটন কেন্দ্র। বর্তমানে দিনে দুই-তিনটির বেশি স্পট দেখা সম্ভব নয়।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমীর হোসেন জানান, সীমান্তকে সামনে রেখে সড়কটির নকশা তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণ শেষে পর্যটকরা চলার পথেই সীমান্ত এলাকার অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এতে শুধু পর্যটনই নয়, বাড়বে কর্মসংস্থান ও চাঙা হবে স্থানীয় অর্থনীতি।
Leave a Reply