পারভেজ আহমদ :::: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছানাকান্দি সীমান্ত পথে ভারত থেকে চোরাইভাবে আসা পেঁয়াজ এখন নতুনভাবে নগরে ছড়িয়ে পড়ছে। পাচারকারীরা সীমান্ত থেকে পণ্য এনে প্রথমেই সালুটিকরের বিভিন্ন গোপন গোদামে মজুত করে। এরপর এই গোদামগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন সকাল থেকেই শুরু হয় পেঁয়াজ পাচারের এক প্রকার ‘মহাযাত্রা’।
চক্রটি মূলত ঠেলাগাড়ি ও ভ্যানগাড়ির চালকদের ব্যবহার করে সহজেই নগরে পেঁয়াজ পৌঁছে দিচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে থাকা এসব চালক প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত অসংখ্য ট্রিপে সালুটিকর থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় পেঁয়াজ বহন করেন।
প্রতি ট্রিপে এসব চালকরা পান প্রায় ১,০০০ টাকা করে। একটি ট্রিপে ১৮০ থেকে ২০০ কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ বহন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে এগুলো সাধারণ পণ্য বা কাঁচাবাজারের মতো সাজিয়ে বোঝাই করা হয়। আর বিষয়টি যাতে নজরে না আসে, সেজন্য ১০/১৩ মিনিট পর পর একেকটি ঠেলাগাড়ি ছাড়া হচ্ছে সালুটিকর থেকে।
সালুটিকর থেকে বের হয়ে এসব ঠেলাগাড়ি প্রধান সড়ক, ছোট রাস্তা, উপসড়ক ও বিকল্প পথ ব্যবহার করে সিলেট নগরে ঢোকে। তাদের প্রধান ডেলিভারি পয়েন্টগুলো হচ্ছে আম্বরখানা, সুবিদবাজার, বন্দরবাজার, কালিঘাট ও কদমতলী এলাকা।
দোকান ও আড়তগুলোতে নিয়মিত সরবরাহ থাকায় চক্রটি দ্রুত বিস্তৃত হয়েছে। চক্রের সদস্যরা প্রতিদিন শত শত ট্রিপের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ চোরাই পেঁয়াজ নগরে প্রবেশ করাচ্ছে, যা স্থানীয় বৈধ ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পেঁয়াজ পাচারকারীরা নিয়মিত কৌশল পরিবর্তন করছে। কখনো মটরচালিত ভ্যান, আবার কখনো ফল-সবজির ঠেলাগাড়িতে তারা চোরাই পেঁয়াজ পরিবহন করছে। একই চালকরা বারবার ব্যবহার না করে প্রতিদিন নতুন মুখও যুক্ত করা হচ্ছে এসব কাজে।
স্থানীয়রা বলছেন, সীমান্ত দিয়ে চোরাই পেঁয়াজ আসা অনেক দিনের সমস্যা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এর পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণ। বিশেষ করে দাম বাড়ার সুযোগে এই চক্রটি আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
বেআইনি পথে দেশে প্রবেশ করা এসব পেঁয়াজের কারণে সরকারি রাজস্ব যেমন হারাচ্ছে, তেমনি সিলেটের বৈধ পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বাজারে সরবরাহ বাড়লেও কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দাম অস্থির হয়ে উঠছে।
সচেতন মহল ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সীমান্তপথে কঠোর নজরদারি, সালুটিকর এলাকার গোপন গোদামগুলোতে নিয়মিত অভিযান এবং নগরের প্রবেশমুখে পর্যবেক্ষণ কঠোর করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই চক্রটিকে এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে পেঁয়াজ বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ভেঙে পড়বে।
Leave a Reply