পারভেজ আহমদ ::: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালের খবরে শোকস্তব্ধ দেশ। শোকের এই মুহূর্তে সিলেটের মানুষের স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে ২০১৮ সালের সেই ফেব্রুয়ারির দিনগুলো- যখন তিনি জীবনের অন্যতম কঠিন সময়ের মুখোমুখি হওয়ার ঠিক আগে শেষবারের মতো এসেছিলেন আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটে।
সিলেট ছিল তার রাজনীতির এক বিশেষ আশ্রয়স্থল। রাজনৈতিক সংকট, অনিশ্চয়তা কিংবা নির্বাচনী প্রস্তুতি- প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তেই তিনি ফিরে আসতেন এই পুণ্যভূমিতে। বরাবরের মতোই সকল নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতেন সিলেট থেকে। তার বিশ্বাস ছিল, ওলি-আউলিয়ার এই মাটি থেকেই রাজনৈতিক লড়াইয়ের শক্তি ও অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়।
২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার মাত্র তিন দিন আগে, তিনি সড়কপথে রওনা হন সিলেটের উদ্দেশ্যে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিলেটে পৌঁছালে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখতে রাজপথে নেমে আসে হাজারো মানুষ। এটি কোনো নির্বাচনী সফর না হলেও মানুষের ভালোবাসা আর আবেগে রূপ নেয় এক নীরব জনসমুদ্রে।
রাজনৈতিক উত্তাপ, পুলিশের কড়াকড়ি আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝেও খালেদা জিয়ার চোখেমুখে ছিল এক ধরনের প্রশান্ত দৃঢ়তা- যেন তিনি জানতেন সামনে কী অপেক্ষা করছে।
সন্ধ্যায় তিনি হাজির হন হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে। মাজারের দীর্ঘক্ষণ মোনাজাতে নিমগ্ন থাকেন তিনি। চারপাশের জনসমাগমের মাঝেও তখন নেমে আসে এক পিনপতন নীরবতা। মাগরিবের নামাজ শেষে তিনি যান হযরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে।
সিলেটের এই দুই ওলির দরবারে সেটিই ছিল তার শেষ উপস্থিতি- শেষ প্রার্থনা। সেদিন রাতেই তিনি ঢাকার পথে রওনা হন। এরপর আর কখনো সিলেটের মাটিতে ফেরা হয়নি তার।
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনে সিলেট ছিল কেবল একটি অঞ্চল নয়, ছিল বিশ্বাস, ভরসা ও আত্মিক শক্তির জায়গা। বারবার সংকটে তিনি সিলেটে এসেছেন, মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় নিজেকে ঋদ্ধ করেছেন। তাই আজ তার মৃত্যুর খবরে সিলেটের মানুষের শোক যেন আরও গভীর, আরও ব্যক্তিগত।
আজ তিনি না ফেরার দেশে। তবে সিলেটের আকাশে, মাজার প্রাঙ্গণে, রাজপথের সেই জনসমুদ্রের স্মৃতিতে খালেদা জিয়া আজও জীবন্ত। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ এর সেই শেষ সফর এখন ইতিহাসের এক আবেগঘন অধ্যায়। আধ্যাত্মিক নগরীতে সেই শেষ ফিরে আসাই হয়তো তাকে সামনে আসা কঠিন দিনগুলোর জন্য মানসিক শক্তি জুগিয়েছিল। সিলেটবাসী আজ স্মরণ করছেন তার সেই নীরব, দৃঢ় ও শেষ উপস্থিতি।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন- এই অস্বাভাবিক-অপূরণীয় ক্ষতি জাতি কোনোদিন পূরণ করতে পারবে না। আপসহীন এই নেত্রী তাঁর সারাটি জীবন জনগণের অধিকারের জন্য, কল্যাণের জন্য, তার সমগ্র জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তার কাছে সবার আগে ও সব কিছুর ঊর্ধ্বে ছিল বাংলাদেশ। সেজন্যই বাংলাদেশের জনগণ দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে এই মহীয়সী নেত্রীকে অকুণ্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন।
Leave a Reply