মো: পারভেজ আহমেদ ::: সিলেটের পাহাড়ি বাতাসে নির্বাচন আসার সঙ্গে সঙ্গে এক ধরনের চাপা উত্তাপ অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে সিলেট–৬ আসনকে ঘিরে যেন ভিন্ন রকমের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। বিএনপির ভেতরে এই আসনের মনোনয়ন নিয়ে চলছে দফায় দফায় আলোচনা, মতবিরোধ আর পর্দার আড়ালের হিসাব-নিকাশ। দলীয় বৈঠকে পর্যন্ত উঠে এসেছে নৈতিক স্খলন থেকে শুরু করে বয়সজনিত সীমাবদ্ধতা—সব ধরনের অভিযোগ। স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ সরাসরি বলেছেন, “প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলে পুরো আসনের সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে।”
স্মৃতির পাতায় এখনো তাজা ২০১৮ সালের সেই বিতর্কিত নির্বাচন—যেখানে বিএনপির প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী প্রত্যাশার বাইরে এক লাখেরও বেশি ভোট পেয়ে সবাইকে চমকে দেন। দলের ভেতরে তার গ্রহণযোগ্যতা এখনো অনেকের কাছে প্রশ্নাতীত। কিন্তু এবারের নির্বাচনের শুরুতেই দল মনোনয়ন দেয় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীকে। ঘোষণা হতেই দলে শুরু হয় মৃদু গুঞ্জন, পরে যা প্রকাশ্য আপত্তিতে রূপ নেয়।
মনোনয়নবঞ্চিত ফয়সল চৌধুরী অবশ্য মুখে কোনো তির্যক মন্তব্য করেননি। তার নীরবতা যেন আরও রহস্যঘেরা। কিন্তু মাঠে—তিনি থেমে থাকেননি। এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, সামাজিক কর্মসূচি—সবই চলছে আগের মতোই। ফলে প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি সত্যিই থেমে গেছেন, নাকি নীরবে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করছেন?
এদিকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিএনপি নতুন এক স্বপ্নচিত্র আঁকছে—“দেশ গড়ার পরিকল্পনা।” ছয় দিনব্যাপী এই কর্মসূচিটি যেন দলকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস। শুধু প্রচারণা নয়, বরং ভবিষ্যতের একটি রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জেন-জি প্রজন্মকে—যারা প্রযুক্তিবিশ্বে বড় হয়েছে, নতুন রাজনৈতিক ভাষা বোঝে এবং সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখানো ছাড়া তরুণ ভোটারদের পাশে পাওয়া যাবে না। তাই জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে দক্ষ মানবসম্পদ, নারী উন্নয়ন, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি ও ক্রীড়া—সাতটি খাতকে সামনে রেখে নতুন এক উন্নয়নচিত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লিফলেট, প্রচারণা দল, ডিজিটাল ক্যাম্পেইন—সব মিলিয়ে বহুস্তরের প্রস্তুতি চলছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন এই পুরো পরিকল্পনার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। তিনি জানান, কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি চূড়ান্ত, পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনী কৌশল নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
সব মিলিয়ে সিলেট–৬ এখন শুধু একটি সংসদীয় আসন নয়—এটি যেন বিএনপির ভেতরের টানাপোড়েন, পুনর্গঠনের প্রয়াস এবং পরবর্তী নির্বাচনে নিজেদের নতুনভাবে উপস্থাপনের প্রতীক। ফয়সল চৌধুরীর নীরবতা, এমরান আহমদের মনোনয়ন, এবং কেন্দ্রের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা—সবকিছু মিলিয়ে এখানে তৈরি হয়েছে এক জটিল অথচ আকর্ষণীয় রাজনৈতিক দৃশ্যপট।
পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে—তা এখনও অনিশ্চিত। তবে নিশ্চিত একটি বিষয়—সিলেট–৬ আসনের আলোচনার মধ্যেই অনেকটা প্রতিফলিত হচ্ছে বিএনপির সামগ্রিক পুনর্বিন্যাসের প্রচেষ্টা।
Leave a Reply