সবসময় ডেস্ক :: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল হতে পারে বুধবার। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এদিকে চলতি মাসের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন ভবনে এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনকে উদ্ধৃত করে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা হবে। প্রথমার্ধের দিন যেহেতু সামনে আছে তাই আপনারা অপেক্ষা করুন।’ নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধের বাকি আছে আর মাত্র এক দিন। ইসি সচিবের বক্তব্য অনুসারে বুধবার বিকালেই হতে পারে তফসিল ঘোষণা। তবে বৃহস্পতিবারও ঘোষণার একটা সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে।
তফসিল ঘোষণার দিনকে সামনে রেখে বেশ কয়েকটি তারিখ নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। কেউ বলছে ২৮ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। আবার কেউ বলছে ৩-৬ জানুয়ারির মধ্যে হবে ভোট। আবার জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট হলে ১৫-২০ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল হবে বলছেন অনেকে। তবে ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ, এ দুটি সপ্তাহের যেকোনো একটিতে ভোটগ্রহণের কথা জানালেও নভেম্বরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ ১৫ তারিখের মধ্যে তফসিল ঘোষণার কথাই বারবার বলছে কমিশন। সাধারণত তফসিল ঘোষণার ৪৫ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করতে হয়। ১৫ নভেম্বর তফসিল হলে ভোট হবে ৩১ ডিসেম্বর শনিবার। আর জানুয়ারিতে হলে ভোট হবে ১-৮ জানুয়ারির মধ্যে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, তফসিলের বিষয়টি হচ্ছে মিনিমাম ৪৪ ক্যালেন্ডার ডে লাগবে। এর নিচে তফসিল ঘোষণা করা যায় না। যেদিন তফসিল হবে ঠিক তার ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে ৪৫ দিনের বেশি হতে পারবে; কিন্তু এক দিনও কম হতে পারবে না। চাইলে ৬০ দিনেও ভোট করতে পারে ৯০ দিনেও করতে পারে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বলা আছে, মনোনয়ন বাছাইয়ের জন্য মিনিমাম তিন দিন দিতে হবে। এখানে তিন দিন না দিয়ে সাত দিনও দিতে পারে। প্রচারণার জন্য ১৪ দিন দিতে হবে, এখানে ১৪ দিন না দিয়ে এক মাসও দিতে পারে। সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, যদি ৫ বা ৬ জানুয়ারি ভোট হয় তা হলে ১৫-২০ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। সুতরাং নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল হলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করতে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি বলেন, আমরা ৪৬ দিনে ভোট করেছি। সংসদীয় আসনের অনেক উপনির্বাচন আমরা ৫১ দিনেও দিয়েছি। অতীতের অন্য জাতীয় সাধারণ নির্বাচনগুলোও ৪৫-৫০ দিনের মধ্যেই করা হয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, তফসিলের ৪৫ দিনের মধ্যে ভোট করতে হয়। এটি ৬০ দিনেও হতে পারে। এখন বিষয় হলো ৪৫ দিন বা ৬০ দিনকে কীভাবে ভাগ করবে, কোন জায়গায় বাড়তি সময় দেবে, প্রতিটি অ্যাক্টিভিটিজের জন্য একটা টাইম ধরা হয়। আমরা যেটা দেখেছি, মাত্র তিন দিনে আমাদের আপিল সম্পন্ন করতে হয়। এটা খুব বেশি প্রেশার হয়ে যায়। এ জায়গায় সময় বাড়িয়ে দিলে ভালো হয়। অন্যান্য জায়গায় সময় বাড়তে পারে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তফসিল হলে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট হতে কোনো সমস্যা নেই। একটু সময় বাড়লে কাজটা কমফোর্ট করা যাবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভালো হতো সব দল যদি নির্বাচনে আসত। আমি মনে করি, আমাদের দেশের স্বার্থে, নির্বাচনি পরিবেশের স্বার্থে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন। বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো যদি নির্বাচনে না আসে তা হলে তাদের ভোটাররা কিন্তু ভোট দিতে চাইবে না। তাতে টার্নওভারটা কম হবে এবং এতে নির্বাচনি পরিবেশ কিন্তু নষ্ট হয়ে যাবে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হবে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা-৩-এ (সংসদ-সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে) বলা হয়েছে, (ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ-অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা, উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন না। নির্বাচনকালীন এই ৯০ দিনে সংসদ অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতাও নেই।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ৩০ জানুয়ারি। সেই হিসাবে চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২৯ জানুয়ারি। গত ২ নভেম্বর শেষ হয়েছে একাদশ সংসদের ২৫তম অধিবেশন। আর ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছে ইসি।
এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানান, ১ নভেম্বর থেকে ৯০ দিনের শুরু হয়েছে। তবে কমিশনের মূল কাজ শুরু হবে তফসিল ঘোষণার পর। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের তারিখ রেখে নভেম্বরের প্রথমার্ধে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি।
সআ/ডিএস
Leave a Reply