সত্য প্রকাশ করা কঠিন, সত্যের মৃত্যু ঘটানো আরও কঠিন। প্রায় সাংবাদিককে নিজের কলম দিয়ে নিজের কবর খুঁড়তে হয় সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে। সুরের তাল-লয়ের মত সাংবাদিককে ঠিক সময়ে থামার কথা জানার গরজ থাকে সত্য প্রকাশের সময়।
সত্য প্রকাশের বেলায় আমি নাজিম থামি না। গায়ে জোর নাই বলে রিকশা টানতে পারি না, তার বদলে এই কলম টানি। কলমের টানে আমি জানান দেই সত্যের সাথে আমার সংযোগ কতখানি। কিছু পণ্ডিতমুর্খ্য যদি মনে করেন গায়ের জোরে সব চলে তবে তারা রিকশা টানুক। খড়ম পায়ে দিয়ে গঙ্গা পার হওয়া ব্যর্থপ্রয়াস করা বাদ দেন। সত্য, সত্য-ই।
যেকোনো সুস্থ ও সভ্যনীতি যখন ধূলিলূণ্ঠিত হয়, বিচারালয়ে আইন যখন ছলচাতুরিতে পদদলিত হয়, শাসক গোষ্ঠী যখন সুশাসন মুষ্ঠি মেরে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা যখন কলুষিত হয় তখনই সংবাদপ্রত্রের কালো কালো অক্ষরগুলো অগ্নিগিরির মতো জ্বলে উঠে দুর্বারে।
সংবাদপত্রের মাধ্যমেই-বিরোদীদলের আওয়াজ বুলেটের মতো ছুটে যায় ন্যায় ও সভ্যতার বৈঠকখানায়। সংবাদপত্রের বয়ান শুনে রাষ্ট্রযন্ত্র/সরকার বা সরকারি দলের সুর মোলায়ের হয় কিংবদন্তিতে। সংবাদপত্র ছাড়া অত্যাধুনিকতার এই জামানায় আর কোনো মাধ্যম নাই যে বিশ্বের সকল সংবাদ এক বিন্দুতে সন্ধিসম স্বাদ এনে দেওয়ার মত। আর এর পেছনে বড়ো কারিগর সাংবাদিক/ সংবাদশ্রমিক।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে চর্চা ও পর্চা দুই থাকা আবশ্যক। সাথে ন্যায়ের ধার ও সত্যের ভার। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চর্চা না থাকলে সংবাদপত্র হয়ে ওঠে প্রহসনের প্রচারমাত্র। আমার কলমের টানে হাস্যরসাত্মক নাটিকা রচিত না হোক এটাই আমি চাই। আমার কলম সত্যের ঘানি টেনেই যাবে, আমার কলম সত্যের চর্চা করেই যাবে।
এহেন বেলায় ছোট্ট করে একটা গল্প মনে পড়ল। তা হলো- হনুলুলুতে বাস করা এক চোর বিশ্বাস করতেন -চুরি একধরনের শিল্প, ইটস অ্যান আর্ট। সেই চোরের মায়ের গলা বড়ো ছিল। সেই চোরের মা বড়ো গলাতে গহনা পরিধান করতে ভালো পাইত। তার চোর ছেলে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে কেউ খুঁজে পারছিল না । তখন ওই মহিলাকে সবাই ‘বড় গলাওয়ালা মা’ বলে চিনত। কথিত আছে- সেই হইতে নাকি বাংলাদেশে এক নতুন একটি প্রবাদের জন্ম হইল ‘চোরের মায়ের বড় গলা’। আমার কাছে এই বাক্যটি আজ ধরা দিয়েছে মিথ্যুকের বড়ো গলা হয়। যারা মিথ্যের সাথে বসবাস করে তাদের গলাই উচ্চস্বরে রিংটন বাজায়।
সে সাংবাদিক সত্য নিয়ে নাড়াচাড়া করে সে সত্যমোদী, সত্য আমোদী। অসত্যের নাটুকেপনায় ভয় করে না। সত্য জল মিথ্যে অনল। সত্যের জলে মিথ্যাকে দমানো যায়, কিন্তু অসত্যের আগুন দিয়ে সত্যকে জালানো যায় না।
ইতিহাস যেমন নিছক অতীতের কোনো বায়না-বয়ান বা বর্ণনা নয় তেমন সত্য ডিঙিয়ে মিথ্যের জয় হয়েছে তাও পৃথিবীর মুখ দেখেনি আজও। পৃথিবীর কুখ্যাত শাসকরাও সত্যে হাত থেকে নিস্তার পায়নি। আমেরিকার শাসক স্যামুয়েল দৌ যাকে নির্মমভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছিল জনগণ। কলম-ই আমার জনগণ মিথ্যা কে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বধ করবে ইন্শ আল্লাহ। আমি নাজিম থামি না, কলম টানি।
ফ্যাক্ট: ওঝার ব্যাটা বনগরু।
Leave a Reply