রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ ও কথিত পরিসংখ্যানবিদ আবু তাহেরের বিরুদ্ধে ট্রেনিংয়ের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠেছে। ট্রেনিং বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবি, তাদের ট্রেনিং না করিয়ে ও তাদের উপস্থিতি হাজিরার জাল স্বাক্ষরে বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন ওই দুই কর্মকর্তা। পাঁচ পর্বের এই ট্রেনিংয়ের মেয়াদ ছিল ৩১শে আগস্ট থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২৫খ্রি. পর্যন্ত। বিল উত্তোলন ও ভাগাভাগি করা হলেও ২৩ ডিসেম্বের ২০২৫ খ্রি. একই দিনে দুইটি ট্রেনিংয়ের কার্যক্রম চলমান ছিল। ২৩ ডিসেম্বর ব্যানার শো, নামে মাত্র ট্রেনিং করা ছিল স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ও প্রশাসনের লোকজন জানাজানির কারণ। শুধু তাই নয়, পাঁচ পর্বের এই ট্রেনিং শুরু করার আগে মাইক্রোপ্লান ট্রেনিংয়ের বরাদ্দ পেলেও সে ট্রেনিং বাস্তবায়ন করা হয়নি।
জানা যায়, Reaching Every Mother and Newborn (REMN)-তে stands for Social and Behavior Change Communication (SBCC)–এর অংশ হিসেবে উঠান সভা যার বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৪ শত টাকা, Reaching Every Mother and Newborn (REMN) অধিবেশন পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান পরিদর্শনে বরাদ্দ ছিল ৪৩ হাজার টাকা, Reaching Every Mother and Newborn (REMN) সেশন কন্ডাকশনে ৭৬ হাজার ৭ শত টাকা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ডিজিএফপি মাঠকর্মীদের মধ্যে মাসিক ইউনিয়ন পর্যায়ের সমন্বয় সভায় বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৮শত টাকা ও উপজেলা পর্যায়ের ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা কর্মশালা (মাতৃ, নবজাতক, শিশু, ইপিআই)-তে বরাদ্দ ছিল ৬২ হাজার ৬শত টাকা। পাঁচ পর্বের ট্রেনিংয়ের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৩ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫শত ৬০ টাকা। যার সিংসভাগ গিলেছেন অভিযুক্ত ওই দুই কর্মকর্তা।
বিল-ভাউচারের সারসংক্ষেপে দেখা যায়, ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সিনিয়র স্টাফ নার্স, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবার কল্যাণ সহকারী, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই), পরিসংখ্যানবিদ, সিএইচসিপি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ও স্টোর কিপার। গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাপোর্ট স্টাফ এই ট্রেনিংয়ের সকল সম্মানি ভাতা, যাতায়াত ভাতা, কলম, প্যাড, ফাইল, ব্যানার, সাউন্ড সিস্টেম, ভেন্যু, নাস্তা ও ডেকোরেশন বাবদ বরাদ্দ। যা নামে মাত্র ও কাগজ-কলমে দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে আত্মাসাৎ করেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, নিয়োগপত্র অনুযায়ী আবু তাহের স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও কাজ করেন পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে। অভিযোগ আছে সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে স্বাস্থ্য সহকারী আবু তাহের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদের পদ বাগিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয় ওই দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি লাগামহীন। যার কারণে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি নিজেই অসুস্থ হতে বসেছে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারী প্রতিবাদ করলে তাদের চাকরি খাওয়ার হুমকি ও দুর্গম এলাকায় বদলি করে দেওয়ার হুমকি থামকি দিয়ে যাচ্ছে ওই অসাধু স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা । সেই সাথে বেশ বেপোরোয়া উঠেছে কথিত পরিসংখ্যানবিদ আবু তাহের। ইতোমেধ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাশিয়ার সামসুল আলামকে জেদের উপর বদলি করেন টাউট ওই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কথিত পরিসংখ্যানবিদ আবু তাহের বলেন, মাইক্রোপ্ল্যান ট্রেনিং করানো হয়নি তা সত্য। তবে হাজিরায় স্বাক্ষর নিয়ে সবাইকে টাকা দেয়া হয়েছে। ট্রেনিং না করে কিভাবে টাকা দিলেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনও সূদত্তর দিতে পারেনি।
ট্রেনিংয়ের টাকা আত্মসাৎ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, সিভিল সার্জন ব্যস্ত থাকায় মাইক্রোপ্ল্যানের কিছু ট্রেনিংগুলো বাদ রয়েছে। তবে ট্রেনিংয়ের টাকা উত্তোলন হয়েছে কি না তা আমি জানিনা। পরিসংখ্যানবিদের নিয়োগ সংক্রান্ত আমি কিছুই জানিনা। তবে ট্রেনিংয়ের কোনও টাকা আমি আত্মসাৎ করিনি। কেউ বললে তা মিথ্যা।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ট্রেনিং হয়েছে কী না এবং পরিসংখ্যানবিদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জেনে ব্যবস্থা নিব।
Leave a Reply