রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
১৯৭১ -এর মুক্তিযুদ্ধের সময় কুড়িগ্রামের রৌমারী অঞ্চল ছিল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুক্তাঞ্চল। এই রৌমারীতে-ই বাংলাদেশের প্রথম বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল ২৮ আগস্ট,১৯৭২খ্রি.। প্রথম বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থার চালুর ৫৪ বছর গত হয়ে গেলেও আজও হয়নি ইতিহাস সংরক্ষণের কোনো পদক্ষেপ ও স্মৃতিফলক স্থাপন। এমন কথার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) উপজেল নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল কুমার হালদারের বরাবর রৌমারীর ইতিহাস সংরক্ষণে স্মৃতিফলক স্থাপনের দাবিতে আবেদনপত্র জমা দেন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের রৌমারী উপজেলা শাখার সদস্য সচিব মো. মশিউর রহমান পলাশ।
আবেদনপত্র সূত্রে জানা যায়, ৯ মাসব্যাপী পাক হানাদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটিতে পরিণত ছিল ৮০০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে এই মুক্তাঞ্চল। শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সাহসিক সিদ্ধান্তের ফলে রৌমারী থানা সদর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকবাহিনীর কবল থেকে সম্পূর্ণভাবে রক্ষা পেয়েছিল। এটি ছিল বাংলাদেশের একমাত্র থানা সদর, যেখানে দখলদার বাহিনী কখনও প্রবেশ করতে পারেনি। তাঁর সরাসরি নির্দেশে ১৯৭১ সালের ৬ আগস্ট লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবীর অধীনে তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেন্টা কোম্পানি রৌমারীর প্রতিরক্ষা দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মেজর জিয়া নিয়মিতভাবে রৌমারী মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করেন। ২৮ আগস্ট ১৯৭১, তাঁর উপস্থিতিতেই রৌমারীতে বাংলাদেশের প্রথম বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। মুক্তাঞ্চলে দেশের প্রথম সামরিক প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠার পেছনেও তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল, এবং তাঁর পরিকল্পনায় রৌমারীর মাটিতেই গড়ে
ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ক্যান্টনমেন্ট৷ রৌমারীর প্রতিরক্ষাকে আরও সুদৃঢ় করতে তিনি পর্যায়ক্রমে জেড ফোর্সের তিনটি নিয়মিত ব্যাটেলিয়ন সেখানে মোতায়েন করেন। সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ষ্ভাবে পরিচালনায় তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও তত্ত্বাবধান ছিল নিরবচ্ছিন্ন। মেজর জিয়া সে সময় একাধিকবার বলেছেন, “রৌমারীতে এসে স্বাধীনতার স্বাদ পাই।” তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসা ও দৃঢ় প্রত্যয়ের ফলেই রৌমারী মুক্তাঞ্চল শত্রুর দখল থেকে চিরকাল মুক্ত ছিল।
মশিউর রহমান পলাশ বলেন, রৌমারী উপজেলার কোনো উপযুক্ত ও দৃশ্যমান স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিফলক স্থাপন ও মুক্তিযদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে ।
Leave a Reply