নিজস্ব প্রতিবেদক :: একদিনে সিলেটে অবৈধভাবে বালু পাথর লুটকালে ২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সকালে জাফলং নদীতে অবৈধ বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনকালে এক শ্রমিক এবং দুপুরে জৈন্তাপুরের ৪ নং বাংলাবাজারে পেলুডার চাপায় আরেক শ্রমিক নিহত হন।
পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষিত সিলেটের জাফলংয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে বালু ও পাথর লুটের মহোৎসব। নদীতে অবৈধভাবে স্থাপিত বোমা মেশিন দিয়ে দিনরাত উত্তোলন করা হচ্ছে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। এর ফলে একদিকে যেমন ধ্বংস হচ্ছে নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য, অন্যদিকে ঝরে পড়ছে শ্রমিকের প্রাণ।
সোমবার সকালে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং নদীতে বোমা মেশিন বসিয়ে পাথর উত্তোলনের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পানিতে পড়ে যান রজব আলী নামে এক শ্রমিক। আড়াই ঘন্টা পর তাকে নদীর তলদেশ থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে চলতি বছরে জাফলংয়ে অবৈধ উত্তোলনের সময় দুর্ঘটনায় নিহত হলেন অন্তত ৫ শ্রমিক। নিহত রজব আলী স্থানীয় বরবন হাওর পূর্ব পাড়া গ্রামের রাহমাতুল্লাহর ছেলে। লাশ উদ্ধারের পর তার বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে। শোকাহত স্বজন ও প্রতিবেশীরা বালু, পাথর লুটে প্রশাসনের নীরবতাকে দায়ী করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই কিছু প্রভাবশালী চক্র প্রশাসনের একাংশকে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। পরিবেশ বিপর্যয় ও প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটলেও দৃশ্যমান কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
জাফলংয়ের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, ইসিএ ঘোষণার পরও এমন লুটপাট চলতে থাকলে জাফলংয়ের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য চিরতরে হারিয়ে যাবে। তারা অবিলম্বে ইসিএ এলাকায় সবধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
লাশ উদ্ধারের পর নিহতের বাড়িতে আসা গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমেদ জানান, নিহতের স্বজনদের সাথে আলোচনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরিবেশবাদীদের মতে, এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই জাফলংয়ের নদী হারাবে তার প্রাণ, আর প্রতিদিন ঝরবে দরিদ্র শ্রমিকদের প্রাণ।
এদিকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ৪ নম্বর বাংলা বাজারে পেলুডার চাপায় এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সোমবার (১২ মে) দুপুর দেড়টায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রতক্ষ্যদশীরা জানান, দুপুরে ৪ নম্বর বাংলাবাজারে বালু লোডিং ফিল্ডে (বালু সাইটে) পেলুডার দিয়ে বালু লোডিংয়ের সময় পেলুডার চাপায় ১ শ্রমিক নিহত হন।
নিহত শ্রমিক জৈন্তাপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের টিলাবাড়ী গ্রামের মৃত জুজু মিয়া ছেলে ৪ সন্তানের জনক মো. কামাল হোসেন (৫০)। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন।
এলাকাবাসী আরো জানান, পেলুডারের মালিক ৪ নম্বর আসামপাড়া বাজারীগুল এলাকার বাসিন্দা মা স্টোন ক্রাশারের মালিক জাহাঙ্গীর আলম।
দূর্ঘটনার খবর জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান পেলুডার চাপায় শ্রমিক নিহতের ঘটনা নিশ্চিত করে জানান, সংবাদ পেয়ে সরজমিনে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিহতের সুরতহাল প্রস্তুত করছি। এই ঘটনায় সঠিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply