বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ নানা গণআন্দোলনে মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অবদান ইতিহাসে উজ্জ্বলভাবে স্বীকৃত। অথচ সেই তারাই আজ নানামুখী বৈষম্য, হুমকি ও ষড়যন্ত্রের শিকার। বিপন্ন হচ্ছে তাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। এই প্রেক্ষাপটে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সরব হয়েছেন মণিপুরী সমাজের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন বৈষম্য আর নানা ষড়যন্ত্রে নৃ-তাত্তিক জাতিসত্তার পরিচয়-অস্তিত্ব গভীর হুমকির মুখে। বৈষম্য কারো কাম্য হতে পারেনা। বৈষম্যহীন দেশ-জাতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সভ্যতার শুরু থেকে যে লড়াই শুরু হয়েছিল সে লড়াই এখনও চলছে। যুগে যুগে প্রাণ দিয়েছেন অনেক মানবতাবাদি-দেশপ্রেমিক। শনিবার রাতে সিলেট নগরীর ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (ইমজা) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের মণিপুরীদের প্রাচীনতম সংগঠন মণিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতির (মসকস) ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মসকস-এর সিলেট জেলা শাখা। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি রোটারিয়ান নির্মল কুমার সিংহ এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম সিংহ। আলোচনায় অতিথি বক্তা ছিলেন ইমজা’র সভাপতি ও যমুনা টিভির আশরাফুল কবীর, ইমজার সাধারণ সম্পাদক ও একাত্তর টিভির সাকিব আহমদ মিঠু, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা, ইমজার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মঈনুল হক বুলবুল, ইমজা নিউজ ডটকম’র সম্পাদক ও ইমজার সাবেক সভাপতি বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, ইমজার সাবেক সভাপতি এনটিভির সজল ছত্রী, ডিবিসি নিউজের প্রত্যুষ তালুকদার, মসকস সিলেট জেলা শাখার সহসভাপতি দীপাল কুমার সিংহ, ডা: উচিত কুমার সিনহা, মণিপুরী নেতা মিলন কুমার সিনহা জ্যোতি, সুশীল বাবু সিংহ, প্রকৌশলী লিপু সিংহ, রনজিত সিংহ, উজ্জল সিংহ, নারী নেত্রী রোটারিয়ান শান্তি রাণী সিনহা, সহ সম্পাদিকা আরতি সিনহা, সিলেট মহানগরের প্রান্তিক সিনহা, অনলাইন প্রেসক্লাবের সহ-সাধারণ সম্পাদক এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়াসহ আরও অনেকে। বক্তারা বলেন, মণিপুরীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ঐতিহাসিকভাবে দেশপ্রেমিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন। তারা স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের পরিচিতি, অধিকার ও মর্যাদা আজও প্রান্তিক পর্যায়ে। বক্তারা বলেন, মণিপুরীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের তালিকাভুক্ত করে তাদের অবদান রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং বঞ্চিত পরিবারগুলোকে প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে অবস্থিত মণিপুরী ললিতকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে মণিপুরী শহীদদের নামসহ ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ নির্মাণের দাবিও ওঠে। আলোচনায় রাজধানী ঢাকায় একটি ‘ইনডিজিনাস কালচারাল ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বিকাশে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বক্তারা সিলেট নগরীর মাছিমপুরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটিতে ‘রবীন্দ্র স্মৃতি ভাস্কর্য’ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং কবির নামে একটি কালচারাল একাডেমি স্থাপনের আহ্বান জানান। এছাড়া নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষাদান, সংবাদপত্র প্রকাশ ও প্রচারমাধ্যমে সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচারের অধিকারের নিশ্চয়তা, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জন্য পৃথক উন্নয়ন কাউন্সিল গঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংরক্ষণের দাবিও উত্থাপন করা হয়। বক্তারা দেশে-বিদেশে সমাদৃত মণিপুরী শিল্প ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন, প্রদর্শন ও বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে বিসিক শিল্প নগরী, স্পেশাল ইকোনোমিক জোন ও বিভাগীয় নগরীতে শুল্কমুক্ত প্রদর্শনী কেন্দ্রের জন্য স্থান বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তাদের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ও সম্পত্তির ওপর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, উত্তরাধিকারদের মালিকানা নিশ্চিতকরণ, আঞ্চলিক ভূমি আইন কার্যকর এবং প্রথাগত ভূমি অধিকারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি উঠে আসে। বক্তারা আরও বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলোতে আঞ্চলিক ছুটি ঘোষণা, জাতীয় সংসদে পুরুষ ও মহিলা সদস্যপদ সংরক্ষণ এবং ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান ছাড়া তাদের অধিকার রক্ষা সম্ভব নয়। বক্তারা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ওপর চলমান বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের উচিত বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা। নতুবা মানবতা, ইতিহাস ও শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি অবমাননা হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি
Leave a Reply