হবিগঞ্জ সংবাদদাতা :: মা বাবার মনোমালিন্যে বলির শিকার হয়েছে ১৫ মাসের অসুস্থ শিশু এনি আক্তার। মায়ের কোলে থাকা শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে ট্রাক থেকে ব্রিজের নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেন পাষন্ড বাবা। এ ঘটনায় পাষন্ড ট্রাক চালক, সাবেক স্বামী ইমরান আহমেদ ও হেলপার বাদলকে আসামি করে শিশু হত্যার দায়ে মামলা করেন নিহত শিশুর মা ইয়াসমিন বেগম।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বানিয়াচং থানাকে ইয়াসমিন জানান, তিন বছর আগে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার গর্দান গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা ইয়াসমিনের বিয়ে হয় সারিঘাট এলাকার ইমরান আহমদের সাথে। ইমরান পেশায় ট্রাক চালক। এর আগে ইয়াসমিনের একটি বিয়ে হয়েছিল। সেই স্বামীর ঘরে সাফি আহমদ (৩) নামে বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
এদিকে ইমরানের কাছে বিয়ে হওয়ার ৩ বছরের সংসার জীবনে তাদের ১৫ মাস বসয়ী এই শিশু কন্যা এনির জন্ম হয়। কিন্তু তাদের সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে কয়েক মাস আগে ইমরান ইয়াসমিনকে তালাক দেন।
এ বিষয় স্থানীয় মুরব্বীদের মধ্যস্থতায় মেয়ের ভরণপোষনের জন্য প্রতি মাসে ইয়াসমিনকে ২ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুয়ায়ী ট্রাক চালক স্বামী ইমরান প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা দিয়ে আসছিল। দুই মাস থেকে টাকা না দেয়ায় গত ২৯ জানুয়ারি ইয়াসমিন তার স্বামী ইমরানের সাথে যোগাযোগ করেন। একই সাথে মেয়ের অসুস্থতার কথা জানান। পরে স্বামী সন্তানকে চিকিৎসা করাবেন বলে জানান।
স্বামীর কথা অনুযায়ী সোমবার সিলেটের শাহপরান থানার দাসপাড়ায় এলাকায় ছেলে মেয়ে নিয়ে অবস্থান করছিলেন ইয়াসমিন। ওই দিন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে ডাক্তার দেখানোর নামে ইমরান তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে ট্রাকে তুলে নেন। এসময় বাদল নামে একজন হেলপারও ছিল।
ইয়াসমিন পুলিশকে আরো জানান, ট্রাক চালানো অবস্থায় ইমরানের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আজমিরীঞ্জে ট্রাকের পাথর নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে গভীর রাতে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ৬নং কাগাপাশা ইউনিয়নের কাগাপাশা বাজারের পশ্চিমে একটি ব্রিজের কাছে ট্রাক থামান ইমরান।
এ সময় ইয়াসমিনের কোলে থাকা অসুস্থ কন্যা শিশু এনিকে কেড়ে নিয়ে ট্র্যাক থেকে ব্রিজের নিচে খালে ফেলে দেন।এসময় শিশু পুত্র সাফিকেও ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেন। ইয়াসমিন তখন তার হাতে পায়ে ধরে সাফিকে রক্ষা করেন বলে জানান। ওই সময় তারা কোথায় অবস্থান করছিলেন তিনি তাও জানতেন না।
ইয়াসমিন জানান, ভোরে নবীগঞ্জের কোন এক জায়গায় তাকে নামিয়ে দিয়ে ট্র্যাক নিয়ে চলে যায় ইমরান ও হেলপার বাদল। পরে স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে টাকা সাহায্য নিয়ে বাড়ি চলে যান তিনি।
এদিকে ৩০ জানুয়ারি সকালে বানিয়াচং থানা পুলিশ খবর পেয়ে এনির লাশ মরদেহ করেন। ওই সময়ে তার পরিচয় না পাওয়ায় মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠায়।
২৪ ঘণ্টা লাশটি মর্গে থাকার পরদিন ৩১ জানুয়ারি ময়না তদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম এর কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা লাশটি দাফন করে।
এদিকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বুধবার রাতে ইয়াসমিন ও তার স্বজনরা শিশুকে কোথায় ফেলানো হয়েছে এসব জানতে পেরে বৃহস্পতিবার ভোরে বানিয়াচং থানায় আসেন। পরে এই ঘটনার বর্নণা দিয়ে বানিয়াচং থানায় সাবেক স্বামী ইমরান আহমেদ ও হেলপার বাদলকে আসামি করে বৃহস্পতিবার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন জানান, আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন থানায় এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ পাঠানো হয়েছে।
সবসময়.কম/দি,সি/স.আ-০২
Leave a Reply