সবসময় ডেস্ক :: এক যুগ পর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ভারত। ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার পর আগের দুটি আসর থেকে সেমিফাইনালেই বিদায়ঘণ্টা বাজে ভারতের। এবারের সেমিফাইনালের ফাঁদ পেরিয়ে ফাইনালে উপমহাদেশের মশাল জ্বালিয়ে রাখল রোহিত শর্মার দল। বুধবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়েছে ভারত।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) সেমির এই তাপ ছড়ানো ম্যাচটি ভারতের জন্য ছিল প্রতিশোধ মিশনেরও। কেননা গত বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেই ফাইনালের রেস থেকে ছিটকে গিয়েছিল ভারত। ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে রেকর্ডের উৎসবে মাতে ভারত। ব্যাটিং বিস্ময় শচিন টেন্ডুলকারের জোড়া রেকর্ড ভাঙেন বিরাট কোহলি।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটার হিসেবে তুলে নেন ৫০তম সেঞ্চুরি। সেই সঙ্গে প্রথম ব্যাটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে সাতশোর্ধ রান করার কৃতিত্ব দেখান কোহলি। এর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডের মালিকানা নিজের করে নেন রোহিত শর্মা। রানোৎসবের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাবে ৩২৭ রানে থামে কিউইদের ইনিংস। ৭০ রানের জয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের মোহম্মদ সামি।
জয়ের জন্য ৩৯৮ রানের বিশাল টার্গেটের সামনে খেলতে নেমে শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে দলকে পথেই রাখেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। দুজনে জুটি বাঁধার সময় নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ছিল ৩৯/২। এখান থেকে দলকে লড়াইয়ে ফেরান উইলিয়ামসন ও মিচেল। তৃতীয় উইকেটে ১৫০ বলের জুটিতে ১৬১ রান যোগ করেন দুজনে। কিউই অধিনায়ককে শিকারে পরিণত করে জুটি ভাঙেন বল হাতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা মোহাম্মদ শামি।
সেঞ্চুরি করা মিচেলকেও আউট করেছেন ডানহাতি এই পেসার। ১১৯ বলে করেন ১৩৪ রান। এছাড়া ৪১ রান আসে গ্লেন ফিলিপসের ব্যাট থেকে। ৭৩ বলের ইনিংসে ৬৯ রান করে আউট হন উইলিয়ামসন। একই ওভারের দুই বল পরই টম লাথামকে শূন্য হাতে ফেরান শামি।
কোহলির ইতিহাস গড়ার দিনটিকে বল হাতে স্মরণীয় করে রাখেন শামি। কিউইদের পতন হওয়া প্রথম পাঁচ উইকেটের সবকটিই নিজের ঝুলিতে ভরেন এই ভারতীয় ফাস্ট বোলার। ইনিংসে ৯.৫ ওভার বল করে ৫৭ রান খরচায় নেন মোট ৭ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এটিই শামির সেরা বোলিং ফিগার।
রোহিত শর্মা নতুন বলে আক্রমণে আনেন জসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজকে। কিন্তু প্রথম ৫ ওভারে কোনো উইকেট পাননি এই দুই পেসার। এরপর ষষ্ঠ ওভারে পরম আস্থায় শামির হাতে বল তুলে দেন ভারত অধিনায়ক। প্রথম বলেই ডেভন কনওয়েকে (১৩) শিকারে পরিণত করে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন শামি। এই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই পরের ওভারেই এই বিশ^কাপের রানমেশিন রাচিন রবীন্দ্রর (১৩) বিদায়ঘণ্টা বাজান শামি। আবার বিপজ্জনক হয়ে ওঠা উইলিয়ামসনকেও সাজঘরমুখো করেন এই ভারতীয় পেসার। পরপরই লাথামের উইকেট নিয়ে কিউইদের জন্য কাজটাকে ভীষণ কঠিন করে দেন শামি।
ভারতের জয়ের ভিতটা গড়ে দেন তাদের ব্যাটাররা। উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৮.২ ওভার থেকে ৮২ রান যোগ করেন রোহিত শর্মা (৪৭) ও শুভমান গিল (৮০*)। মাত্র ২৯ বলের ইনিংসটিতে চারটি ছক্কা হাঁকান ভারত অধিনায়ক। আর সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের প্রথম ব্যাটার হিসাবে ছক্কার হাফসেঞ্চুরি করলেন রোহিত। পরপরই আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন গিল। এরপর কিউই বোলারদের নাকের পানি-চোখের পানি এক করে দেন কোহলি ও শ্রেয়াস আয়ার। ১২১ বলের জুটিতে ১৬৩ রান যোগ করেন দুজনে। ১১৩ বলের ইনিংসে ১২৭ রান করেন কোহলি। ইনিংসটি সাজান ৯ চার ও জোড়া ছক্কায়। আর এই ইনিংসটি খেলার পথে ওয়ানডে ক্রিকেটে শচিনের ৪৯ সেঞ্চুরি ও এক বিশ^কাপে সর্বোচ্চ ৬৭৩ রানের রেকর্ড ভাঙেন কোহলি। মাত্র ৭০ বলের ইনিংসে ১০৫ রান করেন আয়ার। শেষদিকে ঝড় তুলে ২০ বল খেলে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন লোকেশ রাহুল।
উপমহাদেশ ক্রিকেটের ক্রান্তিকালে ফাইনালে উঠল ভারত। আগের দুই বিশ্বকাপে ফাইনালে জায়গা করে নিতে পারেনি উপমহাদেশের কোনো দল। এবারের সেমিতে জায়গা করে নিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের তিন দল। এর আগে সবশেষ উপমহাদেশে বিশ্বকাপের আসর বসেছিল ২০১১ সালে। ওই টুর্নামেন্টে সেমিতে খেলেছিল দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দল। সেরা চারে ছিল ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান।
শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কা। আগামী ১৯ নভেম্বরের ফাইনালে উপমহাদেশের কোনো প্রতিপক্ষকে পাওয়ার সুযোগ নেই ভারতের। কেননা অন্য সেমিতে মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
সবসময়.কম/সআ/ডিএস
Leave a Reply